বাইকের মাইলেজ কমে গেলে করণীয় Best 10 টি উপায়
আজকের আলোচনা বাইকের মাইলেজ কমে যাওয়ার কারণ এবং করণীয়
বাইক বা মোটরসাইকেলের মাইলেজ কমে যাওয়া অনেক চালকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা। মাইলেজ কমে গেলে জ্বালানির খরচ বেড়ে যায় এবং বাইকের কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইলেজ কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা বাইকের বিভিন্ন অংশের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব বা ভুল ব্যবহারজনিত হতে পারে। তবে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে মাইলেজ বাড়ানো এবং বাইকের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব। এই নিবন্ধে আমরা বাইকের মাইলেজ কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
বাইকের মাইলেজ কমে যাওয়ার কারণ:
১. ইঞ্জিনের অপ্রতুল রক্ষণাবেক্ষণ:
ইঞ্জিন হল বাইকের হৃদয়, এবং এটি সঠিকভাবে কাজ না করলে মাইলেজ কমে যেতে পারে।
ইঞ্জিনের আভ্যন্তরীণ অংশগুলির মধ্যে যদি অপরিষ্কারতা বা জ্বালানি জমে থাকে, তবে জ্বালানির সঠিক দহন বাধাগ্রস্ত হয়, যা মাইলেজ কমাতে পারে।
নিয়মিত ইঞ্জিন পরিষ্কার ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এবং বাইকের মাইলেজ কমে যাই ।
২. এয়ার ফিল্টার বন্ধ হয়ে যাওয়া:
বাইকের এয়ার ফিল্টার বাইকের ইঞ্জিনে প্রবেশ করা বায়ু পরিষ্কার করে। এয়ার ফিল্টার যদি ধুলাবালিতে বন্ধ হয়ে যায় ।
তবে ইঞ্জিন পর্যাপ্ত বাতাস পায় না। ফলে জ্বালানি সঠিকভাবে পুড়ে না এবং মাইলেজ কমে যায়।
৩. স্পার্ক প্লাগের সমস্যা:
স্পার্ক প্লাগ ইঞ্জিনে জ্বালানির দহন শুরু করার জন্য স্পার্ক প্রদান করে। যদি স্পার্ক প্লাগ দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাহলে ইঞ্জিনের দহন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে না, ফলে মাইলেজ হ্রাস পায়, অনেক ক্ষেত্রে।
সঠিক সময়ে স্পার্ক প্লাগ পরিবর্তন না করলে এটি মাইলেজ কমার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪. টায়ারের চাপ কম থাকা:
সঠিক টায়ারের চাপ বজায় রাখা বাইকের মাইলেজের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
যদি টায়ারের চাপ কম থাকে, তবে বাইককে বেশি ঘর্ষণ সহ্য করতে হয়।
যা ইঞ্জিনের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং ফলে জ্বালানির খরচ বেড়ে যায়।
৫. ওভারলোড বা অতিরিক্ত ওজন বহন করা:
যদি বাইকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওজন বহন করা হয়, তবে ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়।
এটি মাইলেজ কমিয়ে দেয়, কারণ ইঞ্জিনকে বেশি শক্তি ব্যবহার করতে হয়।
৬. চেইনের টেনশন সঠিক না থাকা:
বাইকের চেইন যদি খুব বেশি ঢিলা বা খুব বেশি টাইট থাকে।
তবে চাকা ঘুরানোর জন্য ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করতে হয়। এই অতিরিক্ত পরিশ্রম মাইলেজ হ্রাস করতে পারে।
৭. খারাপ জ্বালানি:
বাইকে খারাপ বা নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহার করা হলে ইঞ্জিনে সঠিক দহন ঘটে না, ফলে মাইলেজ কমে যায়।
এছাড়াও অপরিষ্কার বা বেশি ইথানল মিশ্রিত জ্বালানি মাইলেজের ওপর প্রভাব ফেলে।
৮. ব্রেকের সমস্যা:
ব্রেক যদি সবসময় চাপা অবস্থায় থাকে বা প্যাড গুলো যদি সঠিকভাবে কাজ না করে।
তবে ইঞ্জিনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং ফলে জ্বালানির খরচ বেড়ে যায়। এই কারণে বাইকের মাইলেজও হ্রাস পায়।
৯. অনিয়মিত পরিষেবা:
বাইককে নিয়মিত পরিষেবা বা সার্ভিসিং প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনিয়মিত পরিষেবা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাইকের পারফরম্যান্স কমে যায়, যা মাইলেজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাইকের মাইলেজ বাড়ানোর উপায়
সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করলে বাইকের মাইলেজ উন্নত করা সম্ভব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলো:
১. নিয়মিত ইঞ্জিন পরিষেবা করান:
ইঞ্জিনের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে মাইলেজ বৃদ্ধি পায়।
প্রতি ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ কিলোমিটার পর ইঞ্জিনের তেল পরিবর্তন করা উচিত।
পুরোনো ইঞ্জিন তেল ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ অংশগুলিতে ঘর্ষণ বাড়িয়ে দিয়ে মাইলেজ কমিয়ে দেয়।
এ ছাড়া ইঞ্জিনের ফিল্টার, স্পার্ক প্লাগ এবং অন্যান্য অংশ নিয়মিত পরিষ্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
২. এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার বা পরিবর্তন:
বাইকের এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করা বা প্রতি ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ কিলোমিটার পর পরিবর্তন করা উচিত।
যদি এয়ার ফিল্টার ময়লাযুক্ত হয়ে যায়, তাহলে বাইকের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং মাইলেজ কমে যায়।
এয়ার ফিল্টার সঠিক থাকলে ইঞ্জিন যথাযথ পরিমাণে বাতাস পায়, যা জ্বালানির কার্যকর দহন নিশ্চিত করে।
৩. সঠিক স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার:
স্পার্ক প্লাগ সঠিক সময়ে পরিবর্তন বা পরিষ্কার করা উচিত।
প্রতি ১০,০০০ কিলোমিটার পর স্পার্ক প্লাগ পরীক্ষা করা উচিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা প্রতিস্থাপন করতে হবে।
সঠিক স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার করলে ইঞ্জিনে সঠিকভাবে জ্বালানি দহন হবে এবং মাইলেজ বৃদ্ধি পাবে।
৪. সঠিক টায়ারের চাপ বজায় রাখুন:
প্রতি সপ্তাহে টায়ারের চাপ পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বয় করুন।
টায়ারের কম চাপ মাইলেজ কমিয়ে দেয় এবং এটি টায়ারের স্থায়িত্বও কমায়।
টায়ারের উপরে থাকা নির্দেশিকা অনুযায়ী সঠিক চাপ বজায় রাখলে মাইলেজ বাড়বে।
৫. অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলুন:
বাইকে অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ইঞ্জিনের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং মাইলেজ কমে যায়।
বাইকে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করুন এবং বাইক ওভারলোড করবেন না।
৬. চেইনের টেনশন ঠিক রাখুন:
বাইকের চেইন নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং সঠিক টেনশন বজায় রাখুন।
যদি চেইন বেশি টাইট বা ঢিলা হয়, তবে এটি মাইলেজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এছাড়াও চেইন নিয়মিত লুব্রিকেট করুন যাতে এটি মসৃণভাবে কাজ করে এবং ইঞ্জিনের উপর চাপ না পড়ে।
৭. উচ্চ মানের জ্বালানি ব্যবহার:
নিম্নমানের জ্বালানি বা বেশি ইথানল মিশ্রিত জ্বালানি ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং মাইলেজ হ্রাস করে।
সর্বদা ভালো মানের জ্বালানি ব্যবহার করুন যাতে বাইকের পারফরম্যান্স সঠিক থাকে এবং জ্বালানি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়।
৮. ব্রেক সঠিকভাবে ব্যবহার:
ব্রেক ব্যবহার করার সময় সচেতন থাকুন। বারবার ব্রেক চাপা বা দীর্ঘ সময় ধরে ব্রেক ব্যবহার করলে ইঞ্জিনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা মাইলেজ কমাতে পারে। ব্রেকের সমস্যার কারণে অতিরিক্ত ঘর্ষণ তৈরি হলে তা মেরামত করুন।
৯. বাইক সঠিকভাবে চালান:
বাইক সঠিক গিয়ারে এবং নির্দিষ্ট গতিতে চালানো মাইলেজ বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গিয়ার ব্যবহার করলে ইঞ্জিনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং মাইলেজ কমে যায়।
এছাড়াও, উচ্চ গতি ও হঠাৎ ব্রেক ব্যবহার করলে মাইলেজ কমে যায়।
মাইলেজ বাড়াতে ধীরে ধীরে অ্যাক্সিলারেটর ব্যবহার করুন এবং সঠিক গিয়ার পরিবর্তন করুন।
১০. নিয়মিত সার্ভিসিং করান:
বাইকের নিয়মিত সার্ভিসিং করলে মাইলেজ বাড়ানো সম্ভব।
সার্ভিসিং এর সময় ইঞ্জিন, ব্রেক, ক্লাচ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরীক্ষা করা হয়। তাই সময়মতো সার্ভিসিং করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
বাইকের মাইলেজ কমে যাওয়ার কারণগুলো সাধারণত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হয়।
সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে মাইলেজ উন্নত হয় এবং জ্বালানি খরচ কমে।
বাইকের মাইলেজ বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ইঞ্জিন পরিষেবা করানো, সঠিক এয়ার ফিল্টার ব্যবহার, স্পার্ক প্লাগের যত্ন নেওয়া, টায়ারের সঠিক চাপ বজায় রাখা, এবং বাইক সঠিকভাবে চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাইলেজ বাড়াতে এবং বাইকের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে এই উপায়গুলো মেনে চললে আপনি দীর্ঘমেয়াদে বাইকের কার্যকরী ব্যবহার উপভোগ করতে পারবেন।
Disclaimer:
The information mentioned above may not be 100% accurate. We collect information from manufacturer websites and other reputable sources. Please let us know if you have received any incorrect or incorrect information.
Bike related আর পোস্ট/ টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখুন । Click Here
Leave a Reply