চেইন লুব্রিকেশন

Motorcycle চেইন লুব্রিকেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ

আজকের আলোচনা মোটরসাইকেলের চেইন লুব্রিকেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ


চেইন লুব্রিকেশন

বাইক বা মোটরসাইকেলের চেইন লুব্রিকেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ মোটরসাইকেলের কর্মক্ষমতা এবং নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চেইন একটি বাইকের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা ইঞ্জিনের শক্তি পেছনের চাকায় স্থানান্তরিত করে।

সঠিকভাবে চেইন লুব্রিকেট করা এবং এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করলে বাইকের চেইন দীর্ঘদিন ভালো অবস্থায় থাকে এবং ঝামেলাহীন যাত্রা নিশ্চিত করা যায়।

নিচে চেইন লুব করার সঠিক নিয়ম ও রক্ষণাবেক্ষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো।

চেইন লুব্রিকেশন কেন প্রয়োজন?

বাইকের চেইন এবং স্প্রকেট অনেক ঘর্ষণ এবং চাপ সহ্য করে।

চেইন যখন ঘুরতে থাকে, তখন মেটালের উপর মেটাল ঘর্ষণ হয়, যা চেইন এবং স্প্রকেট উভয়কেই ক্ষতি করতে পারে।

যদি নিয়মিত চেইন লুব্রিকেট না করা হয়, তবে চেইনের যন্ত্রাংশগুলি শুকিয়ে যাবে, এবং ঘর্ষণ বেড়ে গিয়ে চেইনের স্থায়িত্ব কমে যাবে।

সঠিকভাবে লুব্রিকেট করা চেইন নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো প্রদান করে:

  1. কম ঘর্ষণ: চেইন এবং স্প্রকেটের মধ্যে ঘর্ষণ কমিয়ে বাইকের পারফরম্যান্স বাড়ায়।
  2. আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি: চেইনের আয়ুষ্কাল বাড়ায় এবং স্প্রকেটের ক্ষয় কমায়।
  3. মসৃণ চালনা: চেইন ভালোভাবে লুব্রিকেট করা থাকলে বাইক চলাচল মসৃণ হয় এবং কম শব্দ হয়।
  4. জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি: ঘর্ষণ কম থাকায় ইঞ্জিনের ওপর চাপ কমে এবং ফলে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

চেইন লুব্রিকেশন করার সঠিক সময়:

বাইকের চেইন কতক্ষণ পর পর লুব করতে হবে তা নির্ভর করে বাইকের ধরন, চালনা পরিস্থিতি, এবং চেইনের উপকরণের উপর।

তবে সাধারণত প্রতি ৫০০-৭০০ কিলোমিটার পর পর চেইন লুব করা উচিত।

এছাড়াও কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে চেইন লুব্রিকেট করা দরকার হতে পারে, যেমন:

  1. বৃষ্টির পর: বৃষ্টির পানিতে চেইনের লুব্রিকেন্ট ধুয়ে যেতে পারে। তাই বৃষ্টির পর চেইন ভালোভাবে শুকিয়ে তারপর লুব্রিকেট করা উচিত।
  2. ধুলা-বালিতে চালানোর পর: ধুলাবালিতে চালানোর পর চেইনের উপর ময়লা জমে।
  3. এই ময়লা চেইনের ক্ষতি করতে পারে, তাই এ সময় চেইন পরিষ্কার করে লুব্রিকেট করা উচিত।
  4. লং রাইডের পর: লং রাইডে চেইন অতিরিক্ত ঘর্ষণ ও তাপে শুষ্ক হতে পারে।
  5. তাই লং রাইডের পর চেইন লুব্রিকেট করা প্রয়োজন।

চেইন লুব্রিকেশন করার সঠিক প্রক্রিয়া:

চেইন লুব্রিকেশন করার সময় কিছু ধাপ অনুসরণ করা উচিত যাতে লুব্রিকেন্ট সঠিকভাবে চেইনে লাগানো হয় এবং তা কার্যকর হয়।

নিচে ধাপে ধাপে চেইন লুব করার প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো:

১. বাইক প্রস্তুত করা:

চেইন লুব করার আগে বাইক সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে।

সম্ভব হলে সেন্টার স্ট্যান্ড ব্যবহার করা উচিত যাতে পিছনের চাকাটি ঘুরানো যায় এবং লুব্রিকেশন প্রক্রিয়া সহজ হয়।

২. চেইন পরিষ্কার করা:

লুব্রিকেন্ট দেওয়ার আগে চেইন পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ময়লা, ধুলা, বালি বা পুরোনো লুব্রিকেন্ট জমে থাকলে নতুন লুব্রিকেন্ট সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না।

এজন্য বাইকের চেইন একটি চেইন ক্লিনার বা কেরোসিন ব্যবহার করে পরিষ্কার করতে হয়।

পরিষ্কার করার জন্য একটি ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা চেইনের কোণাগুলিতে ভালোভাবে পৌঁছাতে সক্ষম।

এরপর একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে।

তবে পরিষ্কার করার সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চেইনের ও-রিং বা এক্স-রিং নষ্ট না হয়।

কারণ এই রিংগুলো চেইনের লুব্রিকেশন ধরে রাখতে সাহায্য করে।

৩. লুব্রিকেন্ট নির্বাচন:

চেইনের জন্য সঠিক লুব্রিকেন্ট নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের চেইন লুব পাওয়া যায়, যেমন স্প্রে, তরল, এবং গ্রিজের মতো লুব্রিকেন্ট।

যেটাই ব্যবহার করা হোক, তা অবশ্যই বিশেষত মোটরসাইকেলের চেইনের জন্য তৈরি হওয়া উচিত।

স্প্রে লুব্রিকেন্ট সাধারণত বেশি কার্যকর কারণ এটি সহজে চেইনের প্রতিটি জায়গায় পৌঁছাতে পারে।

৪. চেইনে লুব্রিকেন্ট প্রয়োগ করা:

চেইনের নীচের অংশে লুব্রিকেন্ট স্প্রে করতে হবে।

চেইন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লুব্রিকেন্ট স্প্রে করতে হবে যাতে পুরো চেইনে সমানভাবে লুব্রিকেন্ট পৌঁছায়।

চেইনের বাইরের দিকের চেয়ে ভেতরের দিকে লুব্রিকেন্ট লাগানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চেইনের ভেতরের অংশ স্প্রকেটের সঙ্গে সরাসরি সংযোগে থাকে।

৫. লুব্রিকেন্ট বসতে দেওয়া:

লুব্রিকেন্ট লাগানোর পর সাথে সাথে বাইক চালানো উচিত নয়।

অন্তত ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে যাতে লুব্রিকেন্ট চেইনের মধ্যে ভালোভাবে বসে যায়।

লুব্রিকেন্ট বসে গেলে এটি চেইনের প্রতিটি অংশে সঠিকভাবে ছড়িয়ে যাবে এবং চেইন থেকে ফ্লাই-অফ কম হবে।

চেইনের রক্ষণাবেক্ষণ:

সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ বাইকের চেইনের আয়ু বাড়িয়ে তোলে এবং চেইনের কর্মক্ষমতা বজায় রাখে। রক্ষণাবেক্ষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:

১. চেইনের টেনশন পরীক্ষা:

চেইনের সঠিক টেনশন বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

চেইন খুব বেশি ঢিলা বা খুব বেশি টাইট থাকলে তা বাইকের কর্মক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং চেইনের ক্ষতি করতে পারে।

সাধারণত চেইনের স্ল্যাক (ঢিলাভাব) ২৫-৩০ মিলিমিটার হওয়া উচিত।

নিয়মিত চেইনের টেনশন পরীক্ষা করে প্রয়োজন হলে তা সমন্বয় করা উচিত।

২. চেইন পরিষ্কার রাখা:

চেইন পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে এর আয়ু বৃদ্ধি পায়।

নিয়মিত ধুলাবালি ও ময়লা পরিষ্কার করলে চেইনের ঘর্ষণ কম হবে এবং তা মসৃণভাবে কাজ করবে।

চেইনের ক্লিনার ব্যবহার করে চেইন পরিষ্কার করতে হবে এবং তা শুকিয়ে লুব্রিকেন্ট লাগাতে হবে।

৩. স্প্রকেট পরীক্ষা:

চেইনের পাশাপাশি স্প্রকেটও পরীক্ষা করতে হবে।

স্প্রকেটের দাঁতগুলি যদি অতিরিক্ত ক্ষয়প্রাপ্ত বা বাঁকানো হয়, তবে তা পরিবর্তন করা উচিত।

স্প্রকেট ভালো না থাকলে নতুন চেইনও দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৪. চেইনের আয়ু:

যদিও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে চেইন দীর্ঘদিন টিকে, তবুও চেইনের একটি নির্দিষ্ট আয়ু থাকে।

সাধারণত ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ কিলোমিটার পর চেইন পরিবর্তন করা উচিত।

৫. বিশেষ পরিস্থিতিতে যত্ন:

যদি আপনি বৃষ্টি, কাদামাটি, বা ধুলাবালির মধ্যে চালান, তবে চেইনের আরও বেশি যত্ন নিতে হবে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে চেইন দ্রুত ময়লা হয়ে যায় এবং লুব্রিকেন্ট হারায়।

তাই বিশেষ পরিস্থিতিতে আরও ঘন ঘন চেইন পরিষ্কার ও লুব্রিকেট করা উচিত।

সতর্কতা এবং ভুল এড়ানো:

  1. অতিরিক্ত লুব্রিকেন্ট প্রয়োগ: অনেকেই মনে করেন, যত বেশি লুব্রিকেন্ট লাগানো হবে, তত ভালো হবে।
  2. কিন্তু অতিরিক্ত লুব্রিকেন্ট চেইনে জমে গিয়ে ধুলাবালি আকৃষ্ট করতে পারে, যা চেইনের ক্ষতি করে।
  3. চেইন পরিষ্কার না করা: চেইন পরিষ্কার না করে লুব্রিকেন্ট প্রয়োগ করলে পুরনো ময়লা ও ধুলাবালি চেইনের মধ্যে থেকে যাবে, যা চেইনের ক্ষতি করতে পারে।
  4. ভুল লুব্রিকেন্ট ব্যবহার: সঠিক চেইন লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  5. সাধারণ গ্রিজ বা ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে তা কার্যকর হয় না এবং চেইনে সমস্যা দেখা দেয়।

বাইকের চেইন লুব্রিকেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে করলে তা চেইনের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে এবং বাইকের কর্মক্ষমতা উন্নত করে। সঠিক নিয়মে চেইন পরিষ্কার ও লুব্রিকেট করা, চেইনের টেনশন ঠিক রাখা, এবং স্প্রকেট পরীক্ষা করা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *